-
- আলোচিত খবর
- “মা জননীর শেষ স্পর্শ” : পলাশ কামালী
“মা জননীর শেষ স্পর্শ” : পলাশ কামালী
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশের সময় : নভেম্বর, ১১, ২০২০, ৫:৩৪ অপরাহ্ণ
প্রবাসী ডেস্কঃ
১২ই নভেম্বর নূতনত্বেভরা অন্যরকম অনুভূতির একটি দিন । ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বরের ১২ তারিখ । বাদামী বর্ণের এক বাঙালি যুবক। ভাগ্যের অকৃতিম ইচ্ছায় শুভ্র স্বচ্ছ ধ্রুব তুষার আবৃত ভূখণ্ডে আগমন ! সবই অচেনা অজানা । এক ভিন্নধর্মী অনুভূতি । স্বপ্নভরা আঁখি আর বুকভরা প্রত্যাশা । ভাবনায় কল্পনায় শুধুই “মাসুদ রানার” এগিয়ে চলার দৃঢ় দৃপ্ত শপথ ।
লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের সিরিয়াল উপন্যাস মাসুদ রানা । আমার খুবই প্রিয় সিরিজ ছিল । মাসুদ রানা সিরিজের সবগুলো পর্বই তখন রপ্ত ছিল । নিজেকে মাসুদ রানার বায়বিক চরিত্র ভেবে সকল প্রতিকূলতায় প্রস্তুত রাখা । ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি । সেই বাঙালি টকবকে যুবক আমার আগমন ! জীবনের প্রথম ভিনদেশে আসা । কি করবো , কি করা উচিত ভাবছি আমি ! হেলসিংকির আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট । এয়ারপোর্টের ব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্নতা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েছিলাম সেইদিনই আমি । জীবনের প্রথম ভিনদেশি এয়ারপোর্ট চাক্ষুস দেখা । আমার দেশের ঢাকা এয়ারপোর্টের জন্য মৃদু কষ্টবোধ হয় । এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে যাত্রা শুরু অচিন দেশে ! হঠাৎই সাদা সাদা শুভ্র রাশি রাশি স্বচ্ছ তুষারপাত । স্বাগত জানাচ্ছে আমায় ! নাকি তিরস্কারের ফুলঝুরির ধবল সাদা পাপড়ি ছড়াচ্ছে । নানা জল্পনা কল্পনা মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারছে । শুভ্র স্বচ্ছ তুষারকণা সবই ট্যাক্সির গ্লাসে আছড়ে পরে লেপ্টে যাচ্ছে । আর উইপার যুগল ডান -বাম করে চলার পথ দৃশ্যমানে পরিষ্কারের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে । ট্যাক্সি এয়ারপোর্ট থেকে ১০০ কিলোমিটার ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে চলেছে গন্তব্য পানে ! চোখ জুড়িয়ে জীবনের প্রথম শুভ্র স্বচ্ছ তুষার (স্নো )কণার অবলোকন ।
এটাই যে আমার জীবনের প্রথম তুষার বিলাস । সেটা লজ্জাহীন ভাবে বলতেই পারি ! চারিধার স্বচ্ছ সাদা বরফের চাদরে ঢাকা । ট্যাক্সির গ্লাস ভেদকরে আমার দৃষ্টি ধবল শুভ্রতায় বিমোহিত । চক্ষুযুগল দূরদৃষ্টি সাদা তুষার ভেদ করে কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে ? হয়তো জীবনের নুতন ঠিকানা । নুতন এক অচেনা জীবনের অধ্যায় ! অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম ! চারিদিকে শুধুই শেতাঙ্গ মানুষের আনাগোনা । নিজ বর্ণের এক জনও এখন পর্যন্ত দৃষ্টিপটে আসেনি ! ইংরেজি ভাষায় কুশলাদি বিনিময় করলাম । আমার পরিচয় দেবার চেষ্টা ও সাথে সহযোগিতা কামনাও যে ছিল আমার ! ফ্রেস হয়ে ঘাটের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম । প্রায় ২৪ ঘন্টার আকাশ যাত্রায় বড্ড ক্লান্ত । রুমের বৃহৎ কাঁচের জানালার দিকে চেয়ে আছি । গ্লাস ভেদ করে আমার চক্ষু যুগল বহুদূরে কোথাও স্থির হয়ে আছে । ভাবনায় শুধুই কি করছি ? গতকাল পড়ন্ত বিকেলে মা বাবার স্বপ্নের চাহনি আমি দেখেছি । আমার জন্যে ভালো থাকার আর্শিবাদ ছিল তাদের মমতায় ভালোবাসায় ।
আমি শুধু মা বাবার পদ ধূলি মাথায় নিয়েছিলাম মাত্র । আর দুআ করো বলে বিড়বিড় করেছিলাম । মা বাবার আর্শিবাদে আর উপরআল্লাহর ইচ্ছায় ভিনদেশে এক এক করে অনেক গুলো বছর কাটিয়ে দিলাম । কি পেয়েছি দীর্ঘ প্রবাস জীবনে ? জানিনা । কি হারিয়েছি ? সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি । জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ আমার মা । শুরুতেই পাঁচ বছরের মাথায় মা আমায় ফাঁকি দিয়ে ওই দূর আকাশে চলে গেছেন । মায়ের ঐ অনাকাঙ্খিত চলে যাওয়া আজও আমায় কাঁদায় । জীবনদশায় মায়ের ভালোবাসার শেষ স্পর্শ ১৯৯৬ সালের ১১ ই নভেম্বর । বাবাও ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন ২০১৭ সালের আগস্টে । আমার ভালোবাসা -আস্থা -ভরসার জায়গা গুলো আমি হারিয়ে ফেলেছি ।
জীবন থেকে ভিনদেশে যৌবনের শ্রেষ্ঠ বছর গুলো কাটিয়ে দিলাম । যা পেয়েছি তার অনেক গুন বেশি হারিয়েছি । যা হারিয়েছি তা যে আমার পরম সম্পদ ছিল । সেটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই । এটাই বুঝি প্রায় দুই যুগ প্রবাস জীবনে পরম প্রাপ্তি আমার । অংকের হিসাবে অর্থপ্রাচুর্য্য বিলাসিতায় প্রাপ্তি হয়তো স্থূলকার হয়েছে । কিন্তু আমার প্রবাস জীবনে হারানো সম্পদের হিসাব গাণিতিক ভাবে হিসাব কোষা বেড় করা একেবারেই দুঃসাধ্য । বলতে দ্বিধা নেই দুর্ভাগারাই শুধু প্রবাসী হয় । প্রবাসীরা সর্ব স্থানেই পরবাসী হয়ে যায় । আর প্রবাসীর নীরব কাঁন্না বিলাস বহুল পাঁচ তারকায় ঝিকিমিকি আলোকরশ্মি হয়ে প্রতি রাতেই ডান্স ফ্লোরে ঝড়ে পড়ে ।
লেখক:
পলাশ কামালী,
হেলসিংকি, ফিনল্যাণ্ড
এই বিভাগের আরো খবর